নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের আইটপাড়া আজিজিয়া আলিম মাদরাসার ৪ ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদরাসার সহকারি অধ্যাপক এবিএম নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামের বাড়ি উপজেলার পেরিয়া ইউনিয়নের পূর্ব চাঁন্দপুর গ্রামে।
যৌন নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা গত ১১ডিসেম্বর বুধবার মাদরাসা অধ্যক্ষ মাওলানা শাহজাহান মজুমদারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটি ৩ শিক্ষকের সমন্বয়ে তদন্ত করেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিষয়টি মাদরাসা সভাপতি ও নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-আমিন সরকারকে অবহিত করা হয়।
পরে নির্বাহী কর্মকর্তা গত ২জানুয়ারী বৃহস্পতিবার মাদরাসা কমিটির জরুরি সভা ডেকে ওই সভায় অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করতে রেজুলেশন করেন। ৯জানুয়ারী অভিযুক্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামকে ৭ কর্ম দিবসেরে মধ্যে জবাব দিতে নোটিশ প্রেরণ করেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম উপজেলার দৌলখাঁড় ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল কাশেমের মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের শিকার ছাত্রীদের পরিবারকে টাকা দিয়ে মিমাংসা করার চেষ্টা করছে এবং টাকা নিতে রাজি না হওয়ায় ভূক্তভোগী ছাত্রীদের পরিবারকে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান যৌন নির্যাতনের শিকার ছাত্রীদের পরিবার।
এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষক নজরুল ইসলাম এর আগেও এমন ঘটনার দায়ে ২বার সাময়িক ভাবে চাকুরিচ্যুত হন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ভূক্তভোগী ছাত্রীরা বলেন, আমরা আইটপাড়া আজিজিয়া আলিম মাদরাসার শিক্ষার্থী। আমরা ৪জন মাদরাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে এইবার ৭ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমাদের ৬ষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক নজরুল ইসলাম আমাদেরকে খারাপ ভাবে স্পর্শ করেছে। তিনি আমাদের বুকে, পেটে ও শরীর বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করেছে এবং গায়ের সাথে ঘষাঘষি করেছে ও জোর করে জরিয়ে ধরার চেষ্টা করেছে। এ ঘটনায় আমরা পরীক্ষা চলাকালে অধ্যক্ষে বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছি। এখন পর্যন্ত আমরা কোন বিচার পাইনি। আমরা নজরুল স্যারের উচিৎ বিচার চাই।
যৌন নির্যাতনের শিকার এক ছাত্রীর বড় ভাই বলেন, প্রথমে মনে করেছিলাম প্রতিবাদ করবো না, কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম সে পূর্বেও দুই বার ছাত্রীদের সাথে এমন করায় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এখন সে আমার বোনের সাথে এমন করেছে পরবর্তিতে অন্যদের সাথেও করতে পারে তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছি। অভিযোগ করার পর মাদরাসা কর্তৃপক্ষের তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর থেকে লম্পট শিক্ষক নজরুলের পক্ষ থেকে আমাদের মেম্বারের মাধ্যমে টাকা দিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করতে চায়। আমরা রাজি না হওয়ায় এখন সে আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা এ লম্পটের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক এবিএম নজরুল ইসলাম বলেন, এ গুলো মিথ্যা, আমার ব্যাপারে ষড়যন্ত্র।
আইটপাড়া আজিজিয়া আলিম মাদরাসা অধ্যক্ষ মাওলানা শাহজাহান মজুমদার বলেন, ছাত্রীদের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর মাদরাসা পরিচালনা কমিটি ৩ শিক্ষককে দিয়ে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় বিষয়টি মাদরাসা কমিটির সভাপতি ও নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। পরে তিনি বিশেষ সভা ডেকে ওই সভার রেজুলেশনের মাধ্যমে তাকে ৭ কর্ম দিবসেরে মধ্যে কারণ দর্শনোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এখনো তিনি কোন উত্তর দেননি। পূর্বে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম ২বার কেন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন ছাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও মাদরাসার নিয়ম পরিপন্থি কাজ করায় তিনি বহিস্কার হন।
এব্যাপারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নাঙ্গলকোট পৌরসভা আমীর হারুনুর রশিদ বলেন, ঘটনা আমি শুনেছি। তিনি আমাদের দলের কোন পদপদবী ধারী নেতা নয়।
নাঙ্গলকোট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ঘটনা আমি জেনেছি। এখন বিষয়টি নির্বাহী অফিসারের এখতিয়ার।
মাদরাসা কমিটির সভাপতি ও নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-আমিন সরকার বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভার রেজুলেশন অনুযায়ী নোটিশ করা হয়। এখন নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page